logo

সম্পাদকীয়

 একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যাধুনিক ও কার্যকর যোগাযোগ পদ্ধতি প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে উপযুক্ত ও কার্যকর যোগাযোগ পদ্ধতি অনুসরণ করা গেলেই যে কোনো কার্যক্রমে সাফল্য লাভের নিশ্চয়তা অনেক বেশি থাকে। আর এক্ষেত্রে কৌশলগত যোগাযোগ বা Strategic Communication-এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিসিসিপি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কৌশলগত যোগাযোগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজ করে চলেছে। সংযোগ-এর বর্তমান সংখ্যায় উল্লিখিত বিসিসিপি-র কার্যক্রমগুলো এর সাক্ষ্য বহন করে।

বিষয় ও পরিধিতে সংযোগ হয়তো বা ছোট। কিন্তু বিষয়ের গভীরতায়, চিন্তা ও মননের ক্ষেত্রে এর ব্যাপকতা অনেক। সংযোগ-এর পাঠকের কাছে সেই চিন্তাচেতনার মননশীলতাকে পৌঁছে দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।

শুভেচ্ছা।
 

যোগাযোগ বিষয়ক তথ্যাবলী প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ

 প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ বলতে মতবিনিময়, তথ্য, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং সম্পদের আদান-প্রদানের চলমান প্রক্রিয়াকে বোঝায়। অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরিস্থ সকল বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন এবং পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উপরোক্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ প্রক্রিয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ।

আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ

দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যখন পারস্পরিক ভাব বা মত বিনিময়ের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তখন তাকে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ধরা হয়। মূলত আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ হচ্ছে মুখোমুখি, বাচনিক এবং অবাচনিক উপায়ে দুই বা দুই-এর অধিক ব্যক্তির মধ্যে তথ্য, ধারণা ও অনুভূতি বিনিময় প্রক্রিয়া। আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ অনুভূতি, মূল্যবোধ, সামাজিক প্রথা ও অবস্থার উপর নির্ভর করে।

কাউন্সেলিং

আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের একটি বিশেষ পদ্ধতি হলো কাউন্সেলিং (Counseling) বা পরামর্শদান। কাউন্সেলিং হচ্ছে মুখোমুখি যোগাযোগ যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি জেনে, শুনে ও বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার জন্য কাউন্সেলর সেই ব্যক্তিকে তার সমস্যা চিহ্নিত করতে, ব্যাখ্যা করতে ও তা সমাধানে সাহায্য করেন। কাউন্সেলিং-এর জন্য যে বিষয়গুলো বিবেচিত হয়ে থাকে, তা হচ্ছেÑ ব্যক্তি বা উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিতকরণ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সম্মান ও গুরুত্ব দেয়া, গোপনীয়তা রক্ষা করা, পছন্দমাফিক সেবা গ্রহণে প্রাধান্য দেয়া, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর অনুভূতিকে জোরালো করা, ব্যক্তিগত পক্ষপাত দ্বারা আক্রান্ত না হওয়া এবং ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সুতরাং বলা যায় একটি সফল কাউন্সেলিং-এর জন্য তিনটি জিনিস অপরিহার্যÑ সমান অংশগ্রহণ, সম্মান এবং সততা।

প্রো-এপ্রোচ (Pro Approach)

প্রো-এপ্রোচ এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সেবা বা পণ্যের পরিবর্তে সেবাপ্রদানকারী এবং সেবাগ্রহীতার সাথে তার পারস্পরিক মতবিনিময় গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হয়। মূলত এই পদ্ধতির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ও সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে একজন সেবাপ্রদানকারী স্বাস্থ্যসেবার উৎকর্ষতায় নিজেকে সর্বোতভাবে যুক্ত করতে সক্ষম হন। তবে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, প্রো-এপ্রোচ কোনো শিক্ষানবিশের জন্য প্রযোজ্য নয় বরং এটি একজন পরিকল্পনাকারীর জন্য যিনি একটি পর্যায় পর্যন্ত এই পদ্ধতিটির কার্যকর ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। যার ফলে একজন সেবাগ্রহীতাও স্বাস্থ্য আচরণ পালনে উৎসাহ বোধ করবেন।

সিএসিপিভি-র ফিউচার সার্চ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

 সহিংসতা থেকে শিশু সুরক্ষায় কমিউনিটির করণীয়  একটি  ইউরোপীয় কমিশন সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প। বিসিসিপি প্রকল্পটিতে সহিংসতা থেকে শিশুদের সুরক্ষার জন্য সোশাল এওয়্যারনেস ক্যাম্পেইন ও বহুমুখী যোগাযোগ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে কমিউনিটির জনগণের দ্বারা শিশু সুরক্ষার কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার কাজ করছে। এটি শিশুর প্রতি সহিংস আচরণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় ২৮ মে ২০১৫ ঢাকায় ইউসেপ বাংলাদেশ-এ একটি ফিউচার সার্চ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

কনফারেন্সে আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, প্রধান শিক্ষকবৃন্দ, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ  শিশু/কিশোরবৃন্দ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজ ও সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। কনফারেন্সে শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে কমিউনিটির করণীয় বিষয়ক কাজের পরিকল্পনা তৈরি এবং সম্ভাব্য কার্যক্রম ও ‘শিশু সুরক্ষা ফোরাম’ নিয়ে আলোচনা করা হয়। উল্লেখ্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার-এর প্রতিনিধি নিয়ে কনফারেন্সে ৩২ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘শিশু সুরক্ষা ফোরাম’ গঠন করা হয়।

কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন শিশু সুরক্ষায় কমিউনিটির করণীয় বিষয়ক কর্মসূচির ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর মোঃ সাইদুজ্জামান পাঠান, বিসিসিপি-র উপপরিচালক ডাঃ মোঃ শহিদুল আলম ও শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের সহযোগি অধ্যাপক (নিউরোসাইন্স) সেলিনা হুসনা বানু প্রমুখ। বক্তারা শিশুদের সহিংসতার হাত থেকে রক্ষায় প্রত্যেককে সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্ব পালন করার আহবান জানান। কনফারেন্সে বিসিসিপি-র পক্ষ থেকে সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাদল হালদার, ম্যানেজার ট্রেনিং  ও প্রোগ্রাম অফিসার সনজিত কুমার সরকার।
 

বিসিসিপি সিআরপিএআরপি-র অধীনে বাংলাদেশ বন বিভাগের সাথে অংশীদার

 পরিবেশ পরিবর্তনে নির্বাচিত ঊপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় বন ধ্বংস কমাতে এবং দীর্ঘ মেয়াদী স্বাভাবিক অবস্থা গঠনে সচেতনতামূলক প্রচারণা পরিচালনা করা ও এ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহে ওয়েবভিত্তিক পদ্ধতি প্রণয়নের জন্য বিসিসিপি সম্প্রতি ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট পার্টিসিপেটোরি এ্যাফরেস্টেশন এন্ড রিফরেস্টেশন প্রজেক্ট (সিআরপিএআরপি)-এর অধীনে বাংলাদেশ বন বিভাগের সাথে একটি নতুন চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ বন বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং আরণ্যক ফাউন্ডেশন যৌথভাবে সিআরপিএআরপি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের কার্যক্রমসমূহ বাংলাদেশ আবহাওয়া পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম-পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া পরিবর্তন পুনরুদ্ধার ফান্ডের কার্যক্রমের সাথে সমন্বিত করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে আবহাওয়া পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, যেন জনগণ আবহাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিকূল প্রভাব হতে রক্ষা পায়। এই প্রকল্পটি একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত চারটি অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে, সেগুলো হচ্ছে- অংশগ্রহণমূলক বনায়ন ও পুনঃবনায়ন কার্যক্রম, বনে বসবাসকারীদের বিকল্প জীবিকা নির্বাহের জন্য সহায়তা প্রদান, বন সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা।

অংশগ্রহণমূলক বন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং বন ধ্বংস হ্রাসের উদ্দেশ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ এবং লক্ষ্যভুক্ত ও সাধারণ স্টেকহোল্ডারদের জ্ঞান বৃদ্ধি বিসিসিপি-র অন্যতম দায়িত্ব।

নয়টি উপকূলীয় জেলা এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। জেলাগুলো হচ্ছে- কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরিশাল, পটুয়াখালি, বরগুনা ও ভোলা।

ই-জিপি টেন্ডারিং গাইডলাইনবিষয়ক ফ্ল্যায়ার

 ক্রয় সংক্রান্ত সরকারি ব্যয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের উন্নয়নই পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম প্রজেক্ট (পিপিআরপি-২, ২য় সংশোধিত)-এর লক্ষ্য। বর্তমানে প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ইমপ্লিমেন্টেশন, মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন বিভাগ (আইএমইডি)-এর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম প্রজেক্ট (পিপিআরপি-২, ২য় সংশোধিত)-এর অধীনে বিসিসিপি পুনরায় ই-জিপিসহ চলমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম সম্পর্কিত সামাজিক সচেতনতা প্রচারণা ও যোগাযোগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুনরায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিসিসিপি বিশ্বব্যাংক ও সিপিটিইউ-এর তত্ত্বাবধানে ব্যবহারকারীর গাইড হিসেবে রোড টু ই-জিপি: রেজিস্ট্রেশন এন্ড টেন্ডারিং নামে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সরকারি ক্রয়ের উপর একটি ফ্ল্যায়ার তৈরি করেছে। স্টেকহোল্ডারদের জ্ঞান, সচেতনতা এবং ই-জিপি বোঝার বিষয়টি জোরদার করতে এই ফ্ল্যায়ারে ই-জিপি রেজিস্ট্রেশন ও টেন্ডারিং পদ্ধতি বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য রয়েছে। ফ্ল্যায়ারটি ক্রয়কারী সংস্থা, ঠিকাদার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে প্রচারণা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ, সভা প্রভৃতির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

পরীক্ষামূলকভাবে বিসিসি কার্যক্রম পরিবীক্ষণ উপকরণের ব্যবহার সমাপ্ত

 যদিও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের  বিভিন্ন কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও লিপিবদ্ধকরণের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো রয়েছে কিন্তু সামাজিক আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ (এসবিসিসি) কার্যক্রম পরিবীক্ষণে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থা নেই। এই প্রেক্ষাপটে, বিকেএমআই প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় এসবিসিসি পরিবীক্ষণের টুল হিসেবে একটি চেকলিষ্ট তৈরি করা হয় এবং মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষিত হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো (বিএইচই), জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন) এবং তথ্য, শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণ (আইইএম) ইউনিটের মাঠ পর্যায়ে বিসিসি কার্যক্রম পরিবীক্ষণের জন্য টুলটি তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন সভা ও আলোচনার মাধ্যমে এই টুলটি চূড়ান্ত করা হয় এবং দুটি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। বিগত জুলাই ২০১৪ থেকে জানুয়ারী ২০১৫ পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জের  সদর  উপজেলা এবং  মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে টুলটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। এর কার্যকারিতা দেখার জন্যে ৬ মাস ধরে মাঠ পর্যায়ে টুলটি পরীক্ষার পর ২০১৫-এর মার্চ মাসে কার্যক্রমটি সমাপ্ত করা হয়।

পরিবীক্ষণের জন্য পাঁচটি বিসিসি সূচক সনাক্ত করা হয় যা ছিল- বাড়ি পরিদর্শন, কাউন্সেলিং, উঠান বৈঠক, গণমাধ্যমে প্রচারণা ও এডভোকেসি এবং পরবর্তীতে এগুলো চেকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের সময় দেখা গেছে যে, জেলা ও উপজেলা উভয় পর্যায়ে ব্যবস্থাপকগণ আন্তরিকভাবে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তাদের মতে বিসিসি কার্যক্রম পরিবীক্ষণের উদ্যোগটি তাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের উপর দৃষ্টিপাত করছে যা তারা এতদিন  লিপিবদ্ধ করার কোন সুযোগ পায়নি। এক কথায়, বিসিসি কার্যক্রম পরিবীক্ষণের উপর  ইতিবাচক মনোভাব ও সচেতনতা দেখা গেছে।

ইতিমধ্যে চেকলিস্ট হতে কিছু মুখ্য বিসিসি সূচক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় এমআইএস সিস্টেমে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিসিসি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য, পরবর্তী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সাথে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের ফলাফল শেয়ার করা এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধানদের  সাথে সভা করা।
 

এনএইচএসডিপি-র মিডিয়া ডায়লগ অনুষ্ঠিত

 গণমাধ্যম এবং স্বাস্থ্যবিষয়ে কর্মরত এনজিওদের অধিক সহযোগিতাই পারে দেশের মানুষের বিশেষত মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে- এক মিডিয়া ডায়লগে সাংবাদিক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ মন্তব্য করেন।

জার্নালিসম ইন এসেনশিয়াল হেলথকেয়ার সার্ভিসেস শীর্ষক মিডিয়া ডায়লগটি গত ২৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে ডেইলি স্টার ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। ইউএসএআইডি ও ডিএফআইডি-এর সহায়তায় এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারী প্রজেক্ট (এনএইচএসডিপি) এই মিডিয়া ডায়লগের আয়োজন করে। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ৩০ জন সাংবাদিকসহ ইউএসএআইডি ও এনএইচএসডিপি-র প্রতিনিধি এবং স্থানীয় এনজিও ও সূর্যের হাসি ক্লিনিকের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এনএইচএসডিপি-র রয়েছে পাঁচ বছরের একটি কার্যক্রম যা সমগ্র বাংলাদেশে ২৬টি স্থানীয় এনজিওর সূর্যের হাসি ক্লিনিক, ৩৯২টি স্ট্যাটিক ক্লিনিক, ১০,১৮৬টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক এবং ৭,৩৪৮ জন কমিউনিটি প্রোভাইডারের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে। এ মিডিয়া ডায়লগ থেকে আরো জানা যায় যে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটি ৪০ লক্ষ দরিদ্র মানুষ অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছে যার মধ্যে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, মা ও নবজাতকের সেবা, শিশু স্বাস্থ্যসেবা এবং মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা।

মিডিয়া ডায়লগের সভাপতি দৈনিক মানব জমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, “সকল বাংলাদেশীর, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে মিডিয়াকে অবশ্যই একটি প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে হবে।”অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকগণ বলেন যে, সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সক্ষমতা সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে, পাশাপাশি এনজিও কর্মীদেরও মিডিয়ার সাথে যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। উল্লেখ্য, এই মিডিয়া ডায়লগটি আয়োজনের ক্ষেত্রে বিসিসিপি কারিগরি সহায়তা প্রদান করে।
 

স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের জন্য অনলাইন কোর্স বিষয়ক একটি সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল টোবাকো কন্ট্রোল (আইজিটিসি)’র লার্নিং ফ্রম দি এক্সপার্টস: এ্যান অনলাইন হেলথকেয়ার প্রফেশনালস কোর্স শীর্ষক একটি অনলাইন কোর্স উৎসাহিত করতে বিসিসিপি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস (বিইউএইচএস)-এর সহযোগিতায় গত ২৯ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে প্রথম সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে। সিম্পোজিয়ামটি বিইউএইচএস-এর অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

সিম্পোজিয়ামের আগে ঢাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে প্রচারণামূলক পোস্টারের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার করা হয়। পাশাপাশি অনুষ্ঠান স্থলেই অনলাইন কোর্সে তালিকাভুক্তির জন্য ইন্টারনেট সংযোগসহ তিনটি কম্পিউটার স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন মেডিকেল, নার্সিং, ডেন্টাল এবং ফার্মাসি কলেজের ১০০-এর অধিক শিক্ষার্থী, ঐ কলেজগুলোর অধ্যক্ষ ও ডীন, জনস্বাস্থ্য বিভাগের ¯œাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ সিম্পোজিয়ামে উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক লিয়াকত আলী, উপাচার্য, বিইউএইচএস, সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের ভূমিকা সম্পর্কে তাদেরকে সংবেদনশীল করে তুলতে বিসিসিপি-আইজিটিসি-র এ ধরনের আয়োজনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বিইউএইচএস-এর কোর্স কারিকুলামে এই অনলাইন কোর্সটি অন্তর্ভুক্তির জন্য এবং বাংলাদেশে এই অনলাইন কোর্সের জন্য সিএমই ক্রেডিট প্রবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে একাডেমিক কাউন্সিল গঠনে উদ্বুদ্ধ করতে বিসিসিপি-আইজিটিসি-র কাজে আরো বেশি করে সহযোগিতা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনের পরে সিম্পোজিয়ামে দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বিইউএইচএস-এর কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এমএসএ মনসুর আহমেদ টোবাকো এপিডেমিক এন্ড ইটস হেলথ্ ইফেক্টস শীর্ষক প্রথম প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। দ্বিতীয় প্রতিবেদনটিতে জেএইচএসপিএইচ-বিসিসিপি-র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের টিম লীডার ড. নজরুল হক রোল অব হেলথকেয়ার প্রফেশনালস বিষয়ে কথা বলেন।    

জেএইচএসপিএইচ-বিসিসিপি-র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ডেপুটি টিম লীডার জনাব মোহাম্মদ শামীমুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কোর্সের সারসংক্ষেপ ব্যাখ্যা করেন। এরপর তিনি অনলাইন কোর্সটি দেখানোর মাধ্যমে কীভাবে তালিকাভুক্ত হতে হয় এবং তা সম্পন্ন করতে হয়, সে বিষয়টি অংশগ্রহণকারীদের কাছে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে একটি সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক প্রশ্নোত্তরপর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

অংশগ্রহণকারীগণ বিশেষত মেডিকেল ও পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষার্থীরা কোর্সটি সম্পর্কে অধিক আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং প্রায় ২০জন অংশগ্রহণকারী অনুষ্ঠানস্থলেই অনলাইন কোর্সের জন্য তালিকাভুক্ত হন। অন্যান্যরা ফিরে গিয়ে দ্রুততার সাথে কোর্সটিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেন।

বিইউএইচএস-এর হেলথ প্রমোশন এবং হেলথ এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপক খুরশিদা খানমের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সিম্পোজিয়ামের সমাপ্তি ঘটে। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিইউএইচএস-এর হেলথ প্রমোশন এবং হেলথ এডুকেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী রুমানা আহমেদ।