যোগাযোগ বিষয়ক তথ্যাবলী

আধুনিক যোগাযোগ কৌশলের একটি অন্যতম অনুসঙ্গ হচ্ছে সমাজ উন্নয়ন, শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষন ও কর্মশালা। যেকোন প্রশিক্ষন বা কর্মশালাকে সফল করার জন্য বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা আকর্ষণীয় ও যথাযথ হওয়া প্রয়োজন যাতে বিষয়টির প্রতি অংশগ্রহণকারীদের মনোযোগ আকর্ষিত হয় এবং তারা সেটি অনুসরণে আগ্রহী হয়। এক্ষেত্রে বার্তা উপস্থাপনাকারী বা ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফলপ্রসূ উপস্থাপনার বৈশিষ্ট্য
যেকোন বিষযবস্তুর উপস্থাপনাকে ’ফলপ্রসূ’বা effective করতে হলে ফ্যাসিলিটেটরকে ৮টি বৈশিষ্ট্যের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে, উপস্থাপনাটি তথ্যপূর্ণ (Informative) ও সত্য ঘটনা সম্পর্কিত (Factual) হতে হবে এবং উপস্থাপনা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে অংশগ্রহণকারীদের সার্বিক বৈশিষ্টের ভিত্তিতে। এছাড়াও উপস্থাপনাটি হতে হবে ব্যাখ্যামূলক (Explanatory), সৃজনশীল, আকর্ষণীয়, আনন্দদায়ক এবং সময়োচিত (Time-bound)। এগুলোর সমন্বয় সম্ভব হলেই কেবল বার্তাটি উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠবে।
ফলপ্রসূ উপস্থাপনা ও উপস্থাপকের দক্ষতা
প্রশিক্ষণের বিষয়াবলী অংশগ্রহণকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ওপরই মূলত প্রশিক্ষণ পরিচালনার সফলতা নির্ভর করে। আর এই কাজটি যেহেতু উপস্থাপকের সুতরাং একজন সফল উপস্থাপককে অবশ্যই নিম্নোক্ত বিষয়ে দক্ষতার অধিকারী হতে হবে।
উপস্থাপনার দক্ষতা: ফ্যাসিলিটেটর বা উপস্থাপক অংশগ্রহণকারীদের মুখোমুখি হয়ে এমনভাবে দাঁড়াবেন এবং কথা বলবেন যাতে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক ‘আই কনট্যাক্ট’ স্থাপিত হয়। ফ্যাসিলিটেটর-এর কথা বলার ভঙ্গি সহজ ও সাবলীল হতে হবে এবং কথা বলার সময় মুখে স্বাভাবিক অভিব্যক্তি বজায় রাখতে হবে। অংশগ্রহণকারীরা ফ্যাসিলিটেটর-এর কথা শুনছেন কিনা এবং শুনে বোঝার চেষ্টা করছেন কিনা সেদিকেও তাকে খেয়াল রাখতে হবে।
পর্যবেক্ষণের দক্ষতা: অংশগ্রহণকারীদের অঙ্গভঙ্গির দ্বারা তাদের অনুভূতি বুঝতে হবে এবং সে মোতাবেক কাজ করতে হবে। যেমন, তারা যদি হাস্যজ্জ্বল থাকে তবে ধরে নিতে হবে তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে; আবার কেউ যদি ঘড়ির দিকে তাকাতে থাকে তবে বুঝতে হবে সে বিরক্তি অনুভব করছে এবং কেউ যদি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রশ্ন করে তবে বুঝতে হবে সে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছে এবং এবিষয়ে আরও জানতে চাচ্ছে।
প্রশ্নকরার দক্ষতা: অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় জানা প্রয়োজন, তা হচ্ছে- পরিষ্কার, গোছানো এবং সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা, এমন প্রশ্ন করা যাতে তাদের কৌতূহলের উদ্রেক হয়, বিষয়টি সর্ম্পকে ভাবতে তাদের উৎসাহিত করে এবং অংশগ্রহণকারী যুক্তিপূর্ণ উত্তর দিতে পারেন।
এক্ষেত্রে দুটি পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমত অংশগ্রহণকারীদের স্বেচ্ছায় কোন প্রশ্নের উত্তর দেওযার সুযোগ দেয়া অথবা ফ্যাসিলিটেটর-এর যদি জানা থাকে অংশগ্রহণকারীদের কেউ বিষয়টি সর্ম্পকে জানেন তবে তাকে বলতে বলা।
উত্তর দেয়ার দক্ষতা: অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। নিজেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়া; প্রশ্নকারীকেই অথবা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্য কাউকে প্রশ্নটির উত্তর দিতে উদ্বুদ্ধ করা অথবা পরিস্থিতি অনুযায়ী ’প্রশ্নটি আলোচ্য বিষয়ভুক্ত নয়,’ ‘পরবর্তীতে উত্তর দেয়া হবে’জাতীয় কিছু বলা।
ফলপ্রসূ উপস্থাপনার একটি মূল ভিত্তি হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই জানা দরকার (essential to know) এমন তথ্যের ওপর ফোকাসটা কেন্দ্রীভূত রেখে তবেই অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করা যাতে প্রশিক্ষণ বা কর্মশালার মূল বিষয়বস্তু অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভীড়ে হারিয়ে না যায়। এজন্য প্রয়োজন একটি সঠিক ‘সেশন পরিকল্পনা’আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস: প্রাকটিস, প্রাকটিস এবং প্রাকটিস!