logo

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস্ (বিসিসিপি)-এর মুখপত্র হিসাবে সংযোগ বিষয়বৈচিত্র্যের ব্যাপকতায় পাঠক-মন জয় করতে পেরেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিসিসিপি বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগে সমাজ উন্নয়ন ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করা ও তা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে চলেছে। সংযোগ বরাবরই বিসিসিপি-র এই সকল উদ্যোগকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে আসছে। একুশ শতকে এর পরিধি ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায়  পাঠক বিসিসিপি-র বহুমুখী কর্মসূচির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন।

সে লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, সমাজ উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সম্পাদিত যোগাযোগ কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংবাদ সংযোগের স্বল্প পরিসরে ঠাঁই করে নিয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী সমাজ উন্নয়ন ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে সম্যক ধারণা পাবেন। তদুপরি উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী তাদের বাস্তব জীবনে এর কার্যকর অনুসরণ করতে পারলে আমাদের শ্রম সার্থক বলে বিবেচিত হবে।

শুভকামনা।

উচ্চ-পর্যায়ের লিডারশীপ কর্মশালার ফলোআপ হিসেবে একটি সভা অনুষ্ঠিত

নিপসমের ফ্যাকাল্টি সদস্যদের সাথে কৌশলগত যোগাযোগ বিষয়ক আলোচনার জন্য Discussion on: Strategic Communication শীর্ষক একটি ফলোআপ সভা বিগত ৩ আগষ্ট ২০১৫ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কর্মরত ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। নিপসমের পরিচালক প্রফেসর ড. আখতারুন নাহারের সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে সভাটি শুরু হয়।

উক্ত সভায় বিকেএমআই প্রকল্পের উপ-পরিচালক ড. জিনাত সুলতানা জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কৌশলগত যোগাযোগের গুরুত্ব বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনা করেন। তিনি সামাজিক ও আচরণগত যোগাযোগসহ জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

বিকেএমআই প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়ক কান্তা দেবী সামাজিক ও আচরণগত যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে একটি প্রানবন্ত আলোচনার সূচনা করেন। তিনি এখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এর ভূমিকার উল্লেখ করেন। তিনি বিকেএমআই-এর কারিগরি সহায়তায় তৈরি বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে উল্লেখ করেন যার মধ্যে অন্যতম হলো মাঠ কর্মীদের জন্য এইচপিএন বিসিসি ই-টুলকিট এবং ই-লার্নিং কোর্স, প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবং প্ল্যানারদের  জন্য  ই-টুলকিট এবং ই-লার্নিং কোর্স, তিনটি ই্উনিটের (স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, এবং তথ্য, শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণ ইউনিট) ডিজিটাল  আর্কাইভ।

নিপসমের শিক্ষকবৃন্দ সভা সম্পর্কে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন যোগাযোগ সম্পর্কিত জ্ঞানের কোন বিকল্প নেই। নিপসমের পরিচালক প্রফেসর ড. আখতারুন নাহার বলেন এই সভা শিক্ষকদের জ্ঞান সমৃদ্ধকরণে এবং চিন্তার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। নিপসমের ওয়েবসাইটটি উন্নয়নে তিনি বিকেএমআই-এর সহায়তা কামনা করেন। উক্ত সভায় যোগাযোগ বিষয়ক বাৎসরিক একটি/দুটি কর্মশালার আয়োজন করার সুপারিশ করা হয়। উল্লেখ্য বিগত বছরে অনুষ্ঠিত উচ্চ-পর্যায়ের লিডারশীপ কর্মশালার ফলোআপ হিসেবে এই সভার আয়োজন করা হয়।

এনএইচএসডিপি পরিচালিত সূর্যের হাসি ক্লিনিকগুলোর জন্য বিসিসি উপকরণ

এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট (এনএইচএসডিপি) ইউএসএআইডি ও ডিএফআইডি-এর সহ-অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প। দরিদ্র এবং সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে স্বল্প মূল্যে ও মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত অবস্থার উন্নয়নে এনজিওদের সামর্থ অর্জন এবং মায়ের স্বাস্থ্য, নবজাতকের যত্ন, শিশু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা  উন্নয়নে সরকারি কার্যক্রমে সহায়তা করা- এই মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। বিসিসিপি এনএইচএসডিপি প্রকল্পের একজন অংশীদার হিসেবে আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে চলেছে।

কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর আচরণ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে বিসিসিপি সম্প্রতি মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য যোগাযোগ বিষয়ক উপকরণ প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের জন্য জন্ম পরিকল্পনা কার্ড, চারবেলা খাবার বিষয়ক কার্ড। শিশুস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রয়েছে শিশুর জন্য মায়ের দুধের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক ব্রোশিউর। আর কিশোর-কিশোরীদের জন্য রয়েছে একটি তথ্যমূলক ব্রোশিউর।

উপকরণগুলো কখন, কীভাবে ও কাদের সাথে ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে গাইডলাইনও প্রস্তুত করা হয়েছে। গাইডলাইনটিতে বলা হয় এনএইচএসডিপি-র আওতাধীন এনজিওর অধীনে কর্মরত ক্লিনিকগুলোর যোগাযোগ কার্যক্রমকে গতিময় ও ফলপ্রসূ করে তোলার ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে প্রণয়নকৃত উপকরণগুলো বিতরণ করা হবে। আশা করা যায়, সঠিক সময়ে, সঠিক জনগোষ্ঠীর সাথে, সঠিকভাবে উপকরণগুলোর ব্যবহার করা গেলে বাঞ্ছিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে।

ডাটা ব্যবস্থাপনা, বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন লেখার উপর কর্মশালা অনুষ্ঠিত

২০১৩ সাল থেকে বিসিসিপি এবং জনস্ হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ (জেএইচএসপিএইচ) বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষণাকে উৎসাহিত করতে ‘তামাক গবেষণা কার্যক্রম’ চালু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগস্ট ২৭-২৯, ২০১৫ পর্যন্ত গবেষণা গ্রান্টিসদের জন্য ডাটা ব্যবস্থাপনা, বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন লেখার উপর তিনদিনের একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল।

একই সময়ে গবেষণা গ্রান্টিসগণ কীভাবে ডাটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরি করবে, তার উপরে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কর্মশালায় গ্রান্টিসদের ডাটা ব্যবস্থাপনা, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরির উপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করা হয়। কর্মশালায় ডাটা ব্যবস্থাপনা ও বিশ্লেষণের উপর বেশকিছু হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কর্মশালায় ২০ জন গবেষক গ্রান্টিস উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবছর এই অনুদান বাংলাদেশের কয়েকজন শিক্ষার্থী গবেষক এবং বিশেষজ্ঞ গবেষকদের মধ্যে প্রদান করা হয়।

যোগাযোগ বিষয়ক তথ্যাবলী

যোগাযোগ কার্যক্রম পরিকল্পনা উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর অবস্থান, ভাবনা এবং চাহিদার কথা বিবেচনা করেই প্রণীত হয়। ফলে সমাজ উন্নয়ন ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার প্রচারণার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীতে এই সম্পর্কিত ধারণা ও সেবাসংক্রান্ত চাহিদা বৃদ্ধি গুরুত্ব পায়। উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রথাগত আচরণ পরিবর্তনের পূর্বশর্ত হচ্ছে কার্যকর যোগাযোগ কৌশল নিরূপণ। সুতরাং কার্যকর যোগাযোগ কৌশলই জনগোষ্ঠীর সমাজ উন্নয়ন ও সহজাত স্বাস্থ্য আচরণ পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা হিসেবে একটি সমধর্মী ধারণা উপস্থাপন করে যা পাঁচটি স্বতন্ত্র বিষয়ের নিরিখে গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে।

উপলব্ধি (Perception): বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচারিত তথ্যের আলোকে আত্মপোলব্ধির ভিতর দিয়ে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী তার সহজাত আচরণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসের পরিবর্তন করে থাকে। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার এই পরিবর্তনকে একদিকে যেমন গতিশীল এবং বৈচিত্র্যমুখী করেছে অন্যদিকে তা ইপ্সিত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মানুষের চিন্তা-চেতনাকেও সংহত করে তুলছে।

বিশ্লেষণ (Interpretation): সমাজ উন্নয়ন ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবায় জনমানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারিত তথ্যের বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মূলত তথ্যের টেকসই উপযোগিতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেবাপ্রদানকারী ও গ্রহণকারীর উপর্যুপরি মতবিনিময়ের ভিতর দিয়ে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বাঞ্ছিত আচরণ পরিবর্তন সম্ভব।

ধারণা (Understanding): সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে জনমানুষের প্রথাগত আচরণ পরিবর্তন জনমানুষের ধারণা গঠন সম্পর্কিত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। প্রথমত, সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যখন কোনো অসামঞ্জস্য আচরণ মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়; দ্বিতীয়ত, সামগ্রিকভাবে সামাজিক ও ব্যক্তিক উন্নয়ন বিষয়ক তথ্য যদি জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারে এবং তার ফলে সঠিক আচরণ পালনে সে সক্ষম হয় এবং তৃতীয়ত, সমাজ উন্নয়ন সম্পর্কিত ঐ তথ্যাবলী যদি একটি সুষ্ঠু সামাজিক আচরণবিধি পালনের মাধ্যমে জনমানুষকে শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, তবেই কেবল উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর পক্ষে সহজাত আচরণ পরিবর্তন সম্ভব। সুতরাং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেবাপ্রদানকারীকে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক স্বাস্থ্য ও সমাজ উন্নয়ন সর্ম্পকিত তথ্যাবলীর উপযোগিতা সম্পর্কিত ধারণাকে যথাযথভাবে জনমানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।     

ঐকমত্য (Agreement): জনগোষ্ঠীর প্রচলিত আচরণ পরিবর্তনে সমাজ উন্নয়ন ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয় যেমন- শিশুশ্রম, মানব পাচার, বাল্যবিবাহ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, মাদক সেবন প্রভৃতি বিষয়ে সেবাপ্রদানকারী ও গ্রহণকারীকে একটি ঐক্যমতে পৌঁছতে হবে। যেখানে এই দুয়ের সম্পর্ক হবে আরো অংশগ্রহণমূলক, আরো আকর্ষণমূলক এবং আরো অঙ্গীকারমূলক। এর ফলে সেবাপ্রদানকারী ও গ্রহণকারীর ঐক্যমতের ভিত্তিতে উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে আধুনিক ও আদর্শস্থানীয় বার্তা ও মতবাদ প্রচার সম্ভব এবং তার ফলে সৃষ্ট আলাপ-আলোচনায় জনগণের ইতিবাচক শারীরিক ও মানসিক আচরণ পরিবর্তন সাধিত হয়।

কর্মদ্যোগ (Action): সামাজিকভাবে অভ্যস্ত প্রথাগত আচরণ পরিবর্তনে জনমানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে গণমাধ্যমের ব্যবহার, বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা কৌশল, এ্যাডভোকেসি ইত্যাদির ব্যবহার হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিসমূহ ব্যবহারের ফলে জনগণের কাছে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে যুগোপযোগী আধুনিক সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য-বার্তার উপযোগিতা বিষয়ে পর্যবেক্ষণগত ধারণার জন্ম দেয়। পরবর্তীতে সামাজিক সমর্থন নিয়ে এবং পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্কীয় যোগাযোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক আচরণে পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং জনমানুষের প্রথাগত আচরণ পরিবর্তনে প্রচলিত পদ্ধতিসমূহের ব্যবহারে সেবাপ্রদানকারীকে অধিক সতর্কতা অবলম্বন ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

”ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্ক ফর ইফেক্টটিভ এইচপিএন এসবিসিসি”বাস্তবায়ন গাইডলাইন তৈরি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

এইচপিএনএসডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিসিসি ওয়ার্কিং গ্রুপ কর্তৃক একটি ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয় যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত। বাংলাদেশে পরিচালিত এসবিসিসি কার্যক্রমগুলোর সাথে সরকারী নীতি, কর্মকৌশল এবং পরিকল্পনার সমন্বয়নের জন্য এই ফ্রেমওয়ার্কটি তৈরি করা হয়েছে। এটি ”ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্ক ফর ইফেক্টটিভ এইচপিএন এসবিসিসি” নামে পরিচিত। ফ্রেমওয়ার্কটি ব্যবহার করে এসবিসিসি প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য গাইডলাইন তৈরির উদ্দেশ্যে গত ২৭ শে আগষ্ট ২০১৫ তারিখে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ আকন্দ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রধান এবং লাইন ডাইরেক্টর স্বাস্থ্য শিক্ষা উন্নয়ন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিসিসিপি; রেবেকা আরনল্ড, প্রকল্প পরিচালক, বিকেএমআই এবং ক্যাথেরিন হোলমসেন, ক্যাপাসিটি স্ট্রেনদেনিং ডাইরেক্টর, এইচসিথ্রি। বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী এবং উন্নয়ন সংস্থার ৬১ জন প্রতিনিধি কর্মশালাটিতে অংশগ্রহণ করেন।

ফ্রেমওয়ার্কটি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রোগ্রাম ডিজাইন করার উপর ধারণা দেওয়ার জন্য এবং একই সাথে ফ্রেমওয়ার্কটি বাস্তবায়নে একটি গাইডলাইন তৈরি  করার জন্য গ্রুপ ওয়ার্কের আয়োজন করা হয়।

বিকেএমআই-এর প্রকল্প পরিচালক রেবেকা আরনল্ড উল্লেখ করেন যে, যেহেতু পরবর্তী সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম শুরুর পথে সেহেতু এখন এসবিসিসি প্রোগ্রাম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দেয়া খুবই প্রয়োজন। তিনি আরও উল্লেখ করেন ফ্রেমওয়ার্কটি কার্যকরী, সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং এটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক অনুমোদিত।

মোহাম্মদ শাহজাহান, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিসিসিপি, বলেন বিভিন্ন কাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য আমাদের সমন্বয় এবং সামঞ্জস্য বজায় রাখা প্রয়োজন এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়নে কার্যকরী ও সমন্বিত পদ্ধতি প্রয়োগ করা জরুরি। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মূল্যবান মতামতগুলো ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্ক সাব গ্রুপে আলোচনার মাধ্যমে একটি গাইডলাইন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

ই-জিপি বিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

রয় সংক্রান্ত সরকারি ব্যয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের উন্নয়নই পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম প্রজেক্ট (পিপিআরপি-২, ২য় সংশোধিত)-এর লক্ষ্য। বর্তমানে প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ইমপ্লিমেন্টেশন, মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন বিভাগ (আইএমইডি)-এর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিসিসিপি পুনরায় ই-জিপিসহ চলমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম সম্পর্কিত সামাজিক সচেতনতা প্রচারণা ও যোগাযোগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে।

এই ধারাবাহিকতায় বিসিসিপি পিপিআরপি-২-এর অধীনে জুলাই ২০১৫ থেকে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ‘ই-জিপি সচেতনতামূলক কর্মশালা’ পরিচালনা শুরু করেছে। এই কর্মশালার উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকার ও বেসরকারি ঠিকাদারদের মধ্যে ই-জিপিকে গ্রহণীয় করার বিষয়টি সহজ করতে এ সম্বন্ধে সচেতনতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করা। ই-জিপি সচেতনতামূলক কর্মশালায় ঠিকাদার, ক্রয়কারী সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

ইউপিএইচসিএসডিপি-র বিসিসিএম কার্যক্রমের যাত্রা শুরু

বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য সহযোগী অর্থসহায়তাকরীদের আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় নগর প্রতিনিধি ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নগরবাসীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতোমধ্যে আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট (১৯৯৮-২০০৫) এবং দ্বিতীয় আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট (২০০৫-২০১১) নামে দুটি প্রকল্প সম্পাদন করেছে। পূর্ববর্তী দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিকশিত হওয়ায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন এজেন্সি এবং জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ড-এর আথিক সহায়তায় আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রজেক্ট বা  ইউপিএইচসিএসডিপি (জুলাই ২০১২ - জুন ২০১৭)-এর যাত্রা শুরু করেছে।

প্রকল্পের লক্ষ্য হলো দক্ষ, কার্যকর ও টেকসই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার ও ব্যবহারের মাধ্যমে নগরবাসীর বিশেষত দরিদ্রদের স্বাস্থ্য অবস্থার উন্নয়ন এবং প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে: (১) দরিদ্রদের বিনামূল্যে সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রকল্প এলাকায় আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসের প্রবেশাধিকার এবং ব্যবহারের উন্নয়ন; (২) প্রকল্প এলাকায় আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসের গুণগত মান বৃদ্ধি; এবং (৩) শহর এলাকার দরিদ্রদের চাহিদা মেটাতে আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার ডেলিভারী সিস্টেমের ক্ষেত্রে মূল্য-সাশ্রয়, দক্ষতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক টেকসইয়ের উন্নয়ন ঘটানো।

ইউপিএইচসিএসডিপি-র সহায়তার মাধ্যমে বিসিসিপি আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ ও বিপণন (বিসিসিএম) কার্যক্রম সম্পাদন করছে যা জুলাই ২০১৫ হতে আরম্ভ হয়েছিল। বিসিসিএম কার্যক্রমের অধীনে বিসিসিপি ইতোমধ্যে নিচের তিনটি কার্যাবলী সম্পন্ন করেছে।

ইনসেপশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত: ইউপিএইচসিএসডিপি-র বিসিসিএম বিষয়ক ইনসেপশন কর্মশালা গত ১০ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। পিএমইউ, পিআইইউ এবং পিএ এনজিও থেকে মোট ৪০জন অংশগ্রহণকারী এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। ইউপিএইচসিএসডিপি-র প্রকল্পের পরিচালক জনাব মোঃ আবু বকর ছিদ্দীক ইনসেপশন কর্মশালাটি সভাপতিত্ব করেন। মিস জুয়েনা আজিজ, মহাপরিচালক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ধীরাজ কুমার নাথ, স্টাফ কনসালটেন্ট, এডিবি, বিআরএম, ঢাকা; ইউএনএফপিএ-র প্রজেক্ট টেকনিক্যাল অফিসার, ডাঃ রফিকুস সুলতান; ইউপিএইচসিএসডিপির প্রকল্পের উপ-পরিচালক জনাব মোঃ সাবিরুল ইসলাম (প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ); এবং ইউপিএইচসিএসডিপির প্রকল্পের উপ-পরিচালক ডা. ইয়াছমিন জাহান (সার্ভিস ডেলিভারী)।

কর্মশালায় ৪টি অধিবেশন ছিল: উদ্বোধনী অধিবেশন; বিসিসিএম বিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপনা যা বিসিসিএম টিম লীডার মিজ ইয়াসমিন খান উপস্থাপন করেন; একটি আলোচনা অধিবেশন যেখানে প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর কিছু সুপারিশমালা তৈরি করা হয়; এবং সমাপনী অধিবেশন যেখানে অতিথিরা এবং সভাপতি বিসিসিএম-এর উপাদানসমূহ শক্তিশালী করতে তাদের মতামত দেন। এই কর্মশালায় বিসিসিপি-র পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

ট্রেনিং নীডস এসেসমেন্ট (টিএনএ) এবং বিসিসিএম নীডস এসেসমেন্ট জরিপ: বিসিসিপি গত ১৮-৩১ আগস্ট, ২০১৫ পর্যন্ত একটি ট্রেনিং নীডস এসেসমেন্ট (টিএনএ) এবং একটি বিসিসিএম নীডস এসেসমেন্ট জরিপ কাজ পরিচালনা করে। এই জরিপ ৫টি সিটি করপোরেশন ও ২টি পৌরসভায় পরিচালিত হয়, সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এবং কিশোরগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ পৌরসভা। এই জরিপ কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ ও বিপণন (বিসিসিএম) এবং আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ ও কাউন্সেলিং (আইপিসি/সি) বিষয়ে নির্বাচিত এনজিও স্টাফদের বর্তমান দক্ষতা যাচাই করা; বিসিসিএম ও আইপিসি/সি-এর ক্ষেত্রে তাদের আকাঙ্ক্ষা জানা; এবং আসন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে মাস্টার ট্রেনার হিসেবে নিযুক্ত প্রকল্প স্টাফদের প্রস্তুতি নিরূপণ করা। বলা আবশ্যক যে, এই জরিপ কাজটি উপরোক্ত সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার পিএ এনজিওদের প্রকল্প ব্যবস্থাপক, পরিবার পরিকল্পনা সমন্বয়ক, ক্লিনিক ব্যবস্থাপক, কাউন্সিলর, প্যারামেডিক, মাঠ পরিদর্শক, সার্ভিস প্রমোটর, ফ্যামেলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল।

ম্যাসেজ ডেভেলপমেন্ট কর্মশালা অনুষ্ঠিত: গত ১৩-১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত একটি মেসেজ ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক কর্মশালা মুন্সিগঞ্জের ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। পিএমইউ, পিআইইউ এবং পিএ এনজিও থেকে মোট ৩০জন অংশগ্রহণকারী তিন দিনের এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিএইচসিএসডিপি-র প্রকল্প পরিচালক জনাব মোঃ আবু বকর ছিদ্দীক। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং বিসিসিএম সম্পর্কে তাদের পরিকল্পনা আদান-প্রদান করেন যেখানে বার্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দলীয় কাজে অংশ নিয়ে তারা প্রকল্পের বিদ্যমান বিসিসিএম কৌশলের পাঁচটি মুখ্য আচরণ নির্ধারণ উল্লেখপূর্বক কিছু বার্তা প্রণয়ন করেন। কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ সাবিরুল ইসলাম, উপ-প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ) এবং ডা. ইয়াছমিন জাহান, উপ-প্রকল্প পরিচালক (সার্ভিস ডেলিভারী)। মিজ ইয়াসমীন খান, টিম লীডার, বিসিসিএম, প্রধান ফ্যাসিলিটেটর ও কোর্স সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।