সুস্থ সমাজ গঠন ও সম্পর্ক উন্নয়নে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

‘এটাই আমার জীবনের শেষ দিন হতে পারতো’- কথাগুলো বলছিলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ২৩ বছরের শিক্ষার্থী মিথিলা। শহরের রাস্তায় অস্বস্তিকর দৃশ্য দেখা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে; ফলে সব বয়সের মহিলাই কোনো না কোনোভাবে অপদস্থ হচ্ছেন; আর এই ভয়েই তারা সব সময় তটস্থ থাকেন।
এই গল্পটি সে বলছিলো বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস্ (বিসিসিপি) কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত স্টুডেন্ট লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপ (এসএলডব্লিউ) শেষে আয়োজিত সেমিনারের।
এসএলডিডব্লিউ কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো- কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তাদের সংগঠনের ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করা- যা সমাজের নিন্দনীয় বা খারাপ আচরণ দূর করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই উদ্দেশ্য সহজে অর্জন করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী এবং পুলিশকে একত্রিত করা হয়েছিল; তারা যেনো সমাজের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী বা অশান্তি সৃষ্টিকারী বিষয় নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করতে পারে।
একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় কিছু বখাটে মিথিলাকে অনুসরণ করছিলো, মিথিলা তখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দুই জন পুলিশ কনস্টেবল তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন এবং বখাটেদের গ্রেপ্তার করেন।
মিথিলা বলেন, পুলিশের সাথে সহজেই যোগাযোগের জন্য ভেতরের যে সাহস সঞ্চিত হয়েছে, সেই সাহস যুগিয়েছে বিসিসিপি। এ ধরনের উদ্যোগ হাজারো মিথিলাকে সাহায্য করতে পারে।
পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা কি সে সম্পর্কে কথা বলছিলেন এসএলডিুিব্লউ-এ অংশগ্রহণকারী একজন পুলিশ সদস্য। তিনি বলেন, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা অসৎ এবং খারাপ মানসিকতার; কিন্তু বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যই তাদের (পুলিশের) মূল নীতি মেনেই চলেন এবং তারা বিশ্বাস করে যে কমিউনিটিকে সাহায্য-সহযোগিতা করাই তাদের দায়িত্ব। যখন পুরো দেশের মানুষ কোনো উৎসব উদ্যাপনে জন্যে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগ দেয় তখন পুলিশ সদস্য সমগ্র জাতিকে নিরাপদ এবং উৎসবকে নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে তাদের উৎসব উপভোগ বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো আনন্দকেও উৎসর্গ করেন বা বিসর্জন দেন। সাধারণ মানুষের মনে প্রথিত ভ্রান্ত ধারণা দূর করে পুলিশ সম্পর্কে তার মতামত এবং পরিষ্কার ধারণা প্রদানের সুযোগ দানের জন্যে তিনি বিসিসিপিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এই ফোরাম বিসিসিপি কর্তৃক বাস্তবায়িত এসএলডিডব্লিউ-এর একটি সফল উদ্যোগ বা ফসল। পুলিশের সাহায্য পাওয়ার বা পুলিশকে সাহায্য করার জন্যে এই ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মশালাটির পরিকল্পনা ছিলো- ছাত্র এবং পুলিশের মধ্যে সম্পর্ক হবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল যোগাযোগকারী হিসেবে ছাত্ররা ক্ষমতায়িত হতে শিখবে এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা তৈরি হবে, মতামত আদান-প্রদানের জন্যে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করবে এবং সমাজ গঠনে বহু সংস্কৃতি ও বহুজনে বিশ্বাসী হবে, আর তারা ছাত্র সংগঠনের সক্ষমতা অর্জনে অবদান রাখবে। এভাবেই আমরা চরমপন্থা ও র্যাডিক্যালাইজেশন নির্মূলের লক্ষ্যে পুলিশের সাথে বিশেষভাবে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে সব ধরনের দ্বিধা দূর করতে সক্ষম হবো।
ভিন্ন ভিন্ন ৬টি বিষয় নিয়ে মোট ৬টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ৬টি বিষয় ছিলো- যুব নেতৃত্ব এবং দক্ষতা বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ইন্টারফেইথ ডায়ালগ; রেডিক্যালাইজেশন এবং রেডিক্যালাইজেশন প্রতিরোধ; পুলিশিং এবং রিপোর্টিং ক্রাইম; দেশপ্রেম ও পরিবর্তন আনায়ন; এবং চলমান সামাজিক সমস্যা এবং সমাজে স্থিতিশীলতা।
নেতৃত্ব প্রদান একটি দক্ষতা; এবং এটা সত্যি যে, এসএলডিডব্লউর এই ৬টি ওয়ার্কশপ শেষ করলেই এই দক্ষতা অর্জন সম্পূর্ণ হবে না। যদিও আমরা যে সমাজে বসবাস করি সেই সমাজকে যৌথভাবে সাহায্য - সহযোগিতার করার লক্ষ্যে ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারীদের (পুলিশ ও ছাত্র) একত্রিত হওয়ার জন্যে বিশেষ ক্ষেত্র বা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এই প্রোগ্রামের কার্যকারীতা সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীগণ যে কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করেন বিসিসিপি তা বিনীতভাবেই গ্রহণ করে। বিসিসিপির এই উদ্যোগ ছিলো- অনন্য; তাই এই অভিভূতকারীর প্রতিক্রিয়ায় আমরা উল্লসিত বা আনন্দিত।